নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) জেলহত্যা দিবস পালিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) সকাল ৮টায় শহীদ এ.এইচ.এম. কামরুজ্জামানের সমাধিতে পুষ্পার্ঘ অর্পণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন।

পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। আলোচনা সভার শুরুতে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে ১মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ৩রা নভেম্বরের ঘটনায় যারা নিহত হয়েছেন তাদের সকলের প্রতি প্রথমে আমি শ্রদ্ধা জানাই। যে দেশের মানুষ এতো উদার, এতো সাংস্কৃতিমনা সেই দেশের মানুষ যদি তাদের দেশের স্রষ্টাকে হত্যা করে তা কি মেনে নেওয়া যায়।

যেসকল সেনা সদস্যরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিল তারা অধিকাংশ বাড়িতে উর্দুতে কথা বলত। এদের অনেকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল।মুক্তিযুদ্ধকে সত্যিকার অর্থে ধারণ করলে তারা বঙ্গবন্ধুর মতো একজন মহান নেতাকে হত্যা করতে পারত না। বাংলাদেশের ক্ষমতা হাসিল করার জন্য জিয়াউর রহমানের একটা বিশাল লোভ ছিলো। স্বার্থ হাসিল করার জন্য তিনি এ কাণ্ড করেছিলেন।

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র আরও বলেন, আমাদের চিহ্নিত করা দরকার জাতির পিতার হত্যা ও চার নেতার হত্যার সাথে কারা জড়িত ছিলেন, তারা জীবিত হোক কিংবা মৃত তাদের খুঁজে বের করা দরকার। আমাদের দেখা দরকার এই হত্যার ফলে কারা হৃষ্ট-পুষ্ট হলেন। বঙ্গবন্ধু সহ চার নেতার হত্যার পর পিছিয়ে যাওয়া দেশকে সংগ্রামের মাধ্যমে এগিয়ে নিয়ে গেছে।

জাতীয় চারনেতা থাকলে এই সংগ্রাম করা লাগতো না।তারা বেঁচে থকলে এবং দেশে আসলে অনেক আগেই আমরা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় চলে যেতে পারতাম এবং দেশকে অনেকই আগেই এই পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারতাম, বর্তমান প্রধানমত্রী শেখ হাসিনা যে পর্যায়ে নিয়ে গেছে। জাতীয় চার নেতা বঙ্গবন্ধুর জন্যে, জাতির জন্যে, দেশের মানুষের জন্যে যে প্রাণ উৎসর্গ করলেন তা নিতী ও আদর্শ হিসেবে বার্তা দেয়। এই বার্তা আমরা যেন বহন করে চলতে পারি সামনের দিনেও।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান উল ইসলাম বলেন, ৩রা নভেম্বর বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কলঙ্কময় দিন, ইতিহাসের এক কলঙ্কময় অধ্যায়। ১৫ আগষ্টে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মাধ্যমে যে ধারা তৈরি হয়েছে সেই ধারায় ৩রা নভেম্বরে জাতীয় চার নেতাকে জেলে হত্যা করা হয়েছে।

জাতীয় চার নেতাকে জাতি কখনও ভুলবে না। তারা আমাদের মুক্তির পথ দেখিয়েছে। তারা আমাদের আদর্শ। পথভ্রষ্টরা চেয়েছিল জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করে তাদের আদর্শকে ধুলোয় মিশিয়ে দেবে। কিন্তু তাদের সেই উদ্দেশ্য সফল হয়নি। জাতীয় নেতাদের দেখানো পথেই বাংলাদেশ চলছে। বার বার প্রমাণিত হচ্ছে তারাই সত্য ছিলেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আব্দুস সালামের সঞ্চালনায় সভায় সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার।

আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক দুলাল চন্দ্র বিশ্বাস। বিশেষ অতিথি হিসেবে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক অবায়দুর রহমান প্রামাণিক উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর ৩ নভেম্বর তার ঘনিষ্ঠ চার রাজনৈতিক সহযোগী সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এম মনসুর আলী ও এ এইচ এম কামারুজ্জামানকে কারাগারে হত্যা করা হয়। রাষ্ট্রের হেফাজতে হত্যাকাণ্ডের এই ঘটনাটি বাংলাদেশে পালিত হয়ে আসছে ‘জেলহত্যা দিবস’ হিসেবে।